Wednesday, September 21, 2016

|| আমার ছোটোকাকু ||


টেবিলের ঠিক পাশেই ফোনটা রাখা ছিল; বাজবার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে ধরলাম, ওপাস থেকে আওয়াজ এলো, “কি রে, আবার তুই ফোন ধরেছিস?” এক গাল হেসে বললাম, “আরে ছোটো কাকু!! তুমি ফিরে এসেছো বাংলাদেশ থেকে?” কথাটা শেষ করতে না করতেই, আবার কাকু একটু competitive কন্ঠে বলে উঠলো , “তোদের বাঁশ পড়েছে? আমাদের কিন্তু প্যান্ডেল প্রায় শেষ!” আমিও ছাড়বার পাত্রী না, বললাম, “কি যে বল, লাস্টবার-এর Asian Paint শারোদ সম্মানটা কিন্তু আমরাই পেয়েছিলাম| আমাদের প্যান্ডেলের ফিনিশিং টাচ চলছে! ফাল্গুনী সংঘ তো আমাদের ধরে কাছে আসেনা|” কাদের পুজো কত ভালো, এই নিয়ে বেশ অনেকক্ষণ তর্ক হবার পর, বাবাকে ফোনটা ধরিয়ে চলে গেলাম| তবে এটা জানতাম, পরের বছরও এই তর্ক আবার হবে, আর সেই competitive স্পিরিট নিয়ে ফোনে আবার কার পুজো ভালো সে গল্প হবে|

রথের দিন যখন আমার সামনের পার্কে এবার বাঁশ পড়তে দেখলাম, মনে মনে নিজেকে বললাম, এখন থেকে আর সেই চিরপরিচিত কন্ঠে কেউ আর ফোন করে বলবে না, “তোদের বাঁশ পড়েছে?” 


এক বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু কাকু আমাদের মধ্যে এমন ভাবে মিশে আছে যে মনে হয়না আমাদের সাথে নেই| হ্যা, শারিরীক উপস্থিতি নেই আমাদের মাঝে, তাই যেকোনো অনুষ্ঠান বা আড্ডাতে ছোটো কাকুর অভাব বড্ড বোধ করি|

 মানুষটাকে নিয়ে এত কিছু মনে রাখার মুহূর্ত আছে যে লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখি| আড্ডাবাজ কাকু আমাদের ছিল বিশাল মজার| কানে কম শুনত বলে একটা stylish pose নিয়ে বসতো, কার কাকুর মতে ওই ভাবে বসলে নাকি কেউ বুঝবেনা যে কাকু কানে কম শোনে| বাঁ হাতটাকে মাথার পিছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে, ডান কানটাকে মুচকে ধরত কায়দা করে, সেই ভাবে বসলে নাকি লোকে ভাববে আরাম করে বসেছে| কি অদ্ভূত চিন্তাশক্তি!!

আর একটা ঘটনা মনে পরে গেল, তখন আমরা বরাট এ থাকতাম| পুজোর ঠিক কদিন আগে এসেছে দেখা করতে আমাদের বাড়িতে| কোনো কারনে বাবা দোকনে ছিল তাই আমি আর মা জমিয়ে বসেছিলাম খাবার টেবিল এ আড্ডা দিতে; হঠাৎ টেবিলে পরে থাকা দুটো আস্ত সুপারি সোজা মুখে পুরে দিল| দুটোকে গালের দুদিকে রেখে একটু হেমন্ত কন্ঠে গাইতে সুরু করে দিল, “জাগো তুমি জাগো..... জাগ দূর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিনী...”; আমি আর মা হেসে লুটোপাটি খাচ্ছি, আর কাকু চোখ বন্ধ করে একমনে গেয়ে চলেছে|

যখন এ ছোটো ছোটো মুহূর্ত গুলো মনে পরে, ঠোঁটের কনে ঠিক একটা হাসি চলে আসে – ছোটো কাকু সেরকমই একজন মানুষ| জীবনের শেষ বছরটাতেও একটা অদ্ভূত positive aura ছিল| টাটা ক্যান্সার মেডিকেলে যাবার সময় বাস গুলো আমার অফিসের পাস দিয়ে যেত আর ঠিক সেই সময় আমার Whatsapp বেজে উঠতো – “তোর অফিসের পাস দিয়ে যাচ্ছি|” আমিও হেসে বলতাম, “নেমে পরো মুড়ি খেয়ে যাও|” কাকু উত্তর আসতো, “ফেরার সময় গেটে থাকিস মুড়ি হাতে, কন্ডাক্টারকে বলে তুলে নেব|” ..........এই ছিল আমার ছোটো কাকু|


এক গাল হাসি আর অনেক সুন্দর মুহুর্ত ...এইভাবেই তুমি আছো আমার কাছে|

4 comments:

  1. Ashadharon...mon chhuye gelo lekhata, uni achhen, tor lekhar modhhye diye benche thakben shobshomoy

    ReplyDelete
  2. setai ekmatro rasta Kaku k fire pawa bar bar :) Thanks a lot tui blog tai ese likhli :)

    ReplyDelete